জজ মিয়া কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে আওয়ামীলীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুৎ হওয়ার কয়েকমাস আগে স্থানীয় সাংসদ আফজাল হোসেন ও তৎকালীন উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নিয়মবহির্ভূতভাবে দুই ফসলি কৃষিজমিতে
গড়ে উঠা নতুন একটি ইটভাটা নির্মাণের এক বছর পূরণ হয়ে গেছে।
উপজেলার হিলচিয়া ইউনিয়নের মইতপুর মৌজার ভূল্লা এলাকায় নতুন এই ইটভাটাটির কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
চলতি বছরের শুরুতে এ নিয়ে জাতীয় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিলো।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের নিবন্ধন ছাড়াই বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ইটভাটাটি স্থাপন করেছে এমন অভিযোগ করেছিলো স্থানীয়রা।
তবে যথাযথ কাগজপত্র থাকার দাবি করেছিলো মালিকপক্ষ। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম হোসাইন নতুন ইটভাটা স্থাপনের বিষয়ে জানতেন না বলেও সংবাদমাধ্যকে বলেছিলেন। এবং আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ারও কথা বলেছিলেন।
এবং তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদও বাজিতপুরে নতুন করে ইটভাটা স্থাপনের অনুমতি না দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছিলেন গণমাধ্যমকে।
বর্তমান জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে সংবাদকর্মীরা বেশকয়েকবার বিষয়টি অবহিত করলেও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা লক্ষ করা যাচ্ছে না।
এ নিয়ে সচেতন মহলে রয়েছে চরম ক্ষোভ। স্থানীয়দের ভাষ্য, আওয়ামী সরকারের সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন ও তৎকালীন প্রশাসন অদৃশ্য কারনে অনিয়মের তথ্য জেনেও চুপ হয়ে ব্যবস্থা না নিলেও বর্তমান প্রশাসনতো আর তেমন না। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে সর্বত্র সংস্কারের হাওয়া লাগলেও কিশোরগঞ্জের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে সংস্কার ও পরিবর্তনের হাওয়া কতটুকু লেগেছে তা অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিমাণ দেখেই অনুমান করা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইটভাটার চারপাশে রয়েছে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত। ফসলি জমিতে ইটভাটাটি নির্মাণ করা হয়েছে। কাঁচা ইট তৈরি ও ইট পুড়ানোতে ব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিকরা।
ফসলী জমি খনন করেও ইট তৈরির কাজ চলছে।
জানা যায়, উপজেলায় ১২টি ইটভাটার মধ্যে সাতটি অবৈধ, পাঁচটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মধ্যে নতুন আরেকটি যোগ হওয়ায় ১৩ টি ইটভাটা হয়েছে। নতুন ইটভাটাটি হওয়ায় এলাকার কৃষি ও পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
যারা ইটভাটাটি নির্মাণ করেছেে, তাদের এখানে নিজস্ব কোনো জমি নেই। আত্মীয় স্বজনের জমি ও অন্যের জমি ভাড়া অথবা জোরপূর্বক চুক্তি নিয়ে ভাটার কাজটি চালাচ্ছেন এমন দাবি স্থানীয় বেশ কয়েকজনের। এই ইটভাটাটি চালু হওয়ায় আশপাশের কমপক্ষে ১০০ বিঘা জমির ধান, সরিষা ও পাটের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমকে মালিকপক্ষের একজন জানিয়েছে, ‘আমরা প্রতি একর জমি ৫০ হাজার টাকা দরে পাঁচ বছরের জন্য ইজারা নিয়ে ইটভাটা নির্মাণ করেছি। আমাদের কাছে ইটভাটা স্থাপনের অনুমতির সব কাগজপত্র আছে।’