
শরিফুজ্জামান, নড়াইল প্রতিনিধি :
নড়াইলের লোহাগড়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.আবু রিয়াদের গাড়ির গতিরোধ করে চাঁদাদাবি ও অশ্লীল, অবমাননাকর কবিতা প্রকাশের অভিযোগে লোহাগড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের চাকরিচ্যুত প্রধান শিক্ষক আ: রহিম খানকে (৫৮) গ্রেফতার করে লোহাগড়া থানা পুলিশ।
বুধবার তাকে আটক করে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
লোহাগড়ার বিদায়ী ইউএনও মো. আবু রিয়াদ নিজেই বাদী হয়ে বুধবার রাতে লোহাগড়া থানায় চাকরিচ্যুত ঐ প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিমসহ অজ্ঞাত ৩–৪ জনকে আসামি করে চাঁদাবাজি, হুমকি ধামকি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১ ডিসেম্বর অফিস শেষে ডাকবাংলোর পথে ইউএনওর গাড়ি আটকিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন শিক্ষক মোঃ আব্দুর রহিম ও তার সহযোগীরা। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়।
এছাড়া ইউএনওর ব্যক্তিগত মোবাইলে কুরুচিপূর্ণ বার্তা ও ‘সাড়ে হারামজাদা’ শিরোনামে আপত্তিকর একটি কবিতা বারবার পাঠানোর অভিযোগও রয়েছে। একই কবিতা তিনি ফেসবুকে পোস্ট করে প্রচার করেন, যা ইউএনওর মানহানি ঘটায় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
লোহাগড়া থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) অজিত কুমার রায় বলেন, “আ: রহিমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।”
গ্রেফতারের পর আ: রহিম সাংবাদিকদের জানান, তিনি রাজনৈতিক কারণে চাকুরিচ্যুত হয়েছিলেন। পুনর্বহালের জন্য লোহাগড়া উপজেলার সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া ও কাশিপুর অম্বিকা চরন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.আনোয়ার হোসেনের মাধ্যমে ইউএনওকে “ম্যানেজ” করতে ২ লাখ টাকা দেন বলে দাবি করেন তিনি।
তার অভিযোগ—এ অর্থ শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষক আনোয়ার নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। বিষয়টি প্রকাশ হলে নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন মোল্লার মাধ্যমে তাকে ৮০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন মোল্লা বলেন, “এ ব্যাপারে জানতে পেয়ে আনোয়ার মাস্টারকে বলেছি। পরে তিনি ৮০ হাজার টাকা রহিমকে ফিরিয়ে দেন।”
তবে শিক্ষক আনোয়ার হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সবই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। রহিমের টাকার সঙ্গে আমার নেওয়া ব্যক্তিগত ধার–দেনার কোনো সম্পর্ক নেই।”
সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ ভূঁইয়ার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ইউএনও মো. আবু রিয়াদ বলেন, “কে কাকে টাকা দিয়েছে, সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে আমার প্রতি যে অবমাননাকর আচরণ হয়েছে, তার কারণেই আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছি।”
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের শুরুতে লোহাগড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও অসদাচরণে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিমকে চাকরিচ্যুত করা হয়। গ্রেফতারের ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
শরিফুজ্জামান নড়াইল