মো:ওমর ফারুক রকি
চট্টগ্রাম (প্রতিনিধ)
জাল দলিলসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে সাব-রেজিস্টার রায়হান হাবিব বিরুদ্ধে।
চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ডের সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিবের অপসারণ দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কলমবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন উপজেলায় কর্মরত দলিল লেখকরা। সীতাকুণ্ড দলিল লেখল সমিতির ব্যানারে পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এর আগে গত ৭ অক্টোবর মানববন্ধন থেকে দুই দিনের মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রােরের অপসারণের সময় বেঁধে দিয়ে কলমবিরতির হুঁশিয়ারি দিয়েছিল দলিল লেখক সমিতি।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) কলমবিরতি পালন করতে সকাল ৯টা থেকে দলিল লেখকরা একে একে জড়ো হন উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সামনে। বেলা ১১টার মধ্যে শতাধিক দলিল লেখকের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয় অফিস প্রাঙ্গণ। এ সময় দলিল লেখকরা ঘুষ-দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন দলিল লেখকরা সাধারণ জনগণ। তারা এক ও অভিন্ন দাবি তুলে সাব-রেজিস্ট্রােরের অপসারণ চান।
দলিল লেখকদের মধ্যে একজন খোকন চৌধুরী। তিনি বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিব মাত্রাতিরিক্ত ঘুষ দাবি করেন। ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার নিচে তিনি কোনো ঘুষই নেন না।আর কাজ যদি বড় হয় তাহলে, তিনগুণ লাগে। তার এই ঘুষ বাণিজ্য যেন সাধারণ জনগণের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে প্রতিনিয়ত একটি চিন্তাধারা নিয়েই কাজ করে কিভাবে পকেট ভর্তি করে টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরবে।
ওমর ফারুক সোহেল নামের অপর দলিল লেখক বলেন, জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমার সাথে তার সখ্যতা রয়েছে। উপর মহলের এমন হুমকি-ধমকি দিয়ে, তিনি প্রতিনিয়ত দলিল লেখকদের হেনস্তা করেন। অনেক টাকায় বিনিময়ে সীতাকুণ্ডে নিয়োগ পেয়েছেন। এবং, যে কোনো মূল্যে এই অর্থ তুলে আনতে হবে- এমন কথা দলিল লেখকদের প্রায়ই সময় বলেন সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিব। তার এই অপকর্মে কোন দলিল লেখক যদি প্রতিবাদ করে তাহলে তাকে চাকরি হারাতে হয় বা হতে হয় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন।
নবীন দলিল লেখক শাহাবউদ্দীন বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার। তিনি দলিল লেখকদের ন্যূনতম সৌজন্যতা দেখনো দূরে থাক, যখন তখন হেনস্তা করেন।
দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল কামাল বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিবের আচরণ অনেকটা মারমুখী। দুদিন আগে তার ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলিল লেখকদের মানববন্ধনের পর তিনি নকলনবিসদের দিয়ে জোরপূর্বক পাল্টা মানববন্ধন করান। তার কাছে অপরাধবোধ তো নেই, উল্টো দলিল লেখকদের চরিত্র হননের চেষ্টা করছেন তিনি।
সহ-সভাপতি মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার আগে যে পরিমাণ ঘুষ নিতেন, ৫ আগস্টের পর তার ঘুষ লেনদেনের পরিমাণ আরো বহুগুণ বেড়ে গেছে।
দলিল লেখক কমিটির সভাপতি রফিক উদ্দীন আহাম্মদ বলেন, ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ সাব-রেজিস্ট্রার অপসারণ না হলে আমাদের কলমবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।
এদিকে এসব বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমা বলেন, একজন দলিল লেখককে সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিব শোকজ করেছেন। সে শোকজের জবাব পাওয়ার পর আমি তদন্তে যাব। কিন্তু দলিল লেখকরা ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন, কলমবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। ইতোমধ্যে সরকারের দলিল নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এসব বিষয়ে আপনি কী পদক্ষেপ নিয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ তুললে তো হবে না, এসবের সুনিদিষ্ট প্রমাণ লাগবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ইন্ধনে সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিব ঘুষ-দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়েছেন, অভিযোগটি সত্য নয়।