আবু জাফর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরায় মহাপঞ্চমীতে সায়ংকালে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। বুধবার মহাষষ্ঠীতে দুর্গাদেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠী বিহিত পূজা এবং সায়ংকালে দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
সাতক্ষীরা জেলায় এবছর ৫৪৮টি মন্ডপে দুর্গাপূজা পালিত হচ্ছে। সাতক্ষীরা সদরসহ জেলার অধিকাংশ মন্দিরে প্র¯‘ুতি শেষে শুরু হয়েছে শারদীয় দূর্গাপূজা। ভাস্কররা ব্যাস্ত সময় পার করে শেষ করছেন প্রতিমার সৌন্দর্য বর্ধন। দুর্গোৎসবকে পরিপূর্ণভাবে সাজাতে মন্দিরগুলোতে দিনরাত ব্যাপক প্রস্তুুতি শেষে শুরু হয়েছে দূর্গা উৎসব। মন্দির এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে সাতক্ষীরায় দুর্গাপূজা উদযাপনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে বলে দাবি জেলা পূজা উদযাপনকমিটির নেতৃবৃন্দের। এদিকে, উৎসব মূখর পরিবেশে দূর্গাপূজাউদযাপনের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জেলায় ২৭৪ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
গত ২ অক্টোবর শুভ মহালয়ার মাধ্যমে দূর্গাপূজার ডামাডোল বাঁজলেও আজ ৯ অক্টোবর মহা ষষ্ঠী’র মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে এ শারদীয় দুূর্গোৎসব। জাতির মঙ্গল কামনায় সব অশুভ শক্তি বিনাশে প্রতিবছর মহালয়ার দিনে দেবী দূর্গা শ্বশুরালয় থেকে পিতৃগৃহে আগমন করেন। আসুরিক শক্তির বিনাশ আর পার্থিব শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি লাভের জন্য হিন্দু সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে মা দূর্গার আরাধনা করে আসছেন।
এদিকে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল জনসাধারণের সহযোগিতায় শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জেলাবাসী। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানান, এবার জেলার সাতটি উপজেলায় ৫৪৮ টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর এ জেলায় ৬০৬ টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। যা গত বছরের তুলনায় ৫৮টি কম হয়েছে। এর মধ্যে আশাশুনি উপজেলার ৯৫টি পুজামন্ডপ, শ্যামনগর উপজেলায় ৬৫টি, কালীগঞ্জ উপজেলার ৪৯টি,দেবহাটা উপজেলার ২১টি, সদর উপজেলার ৯৯টি, কলারোয়া উপজেলায় ৩৯টি, তালা উপজেলায় ১০০টি ও পাটকেলঘাটা থানায় ৮০ টি মন্ডপে পূুজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব পূজা মন্ডপের মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ রয়েছে ৭৮টি, গুরুত্বপূর্ণ রয়েছে ৯০টি।
সাতক্ষীরা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, ব্যাপক উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। যদিও জেলায় এবার প্রচুর বন্যা, সে কারণে কিছু পূজা কম হবে।
নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের নেতৃবৃন্দ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। তারা আশ্বস্ত করেছেন, কোনো অসুবিধা হবে না। আপনাদের পাশে আমরা আছি এবং থাকব। সবাই মিলেমিশে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব। জেলা মন্দির সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিত্যনন্দ আমিন জানান, এ বছর অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারনে কয়েকটি পূজামন্ডপে প্রতিমা স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী দূর্গাপুজা পালন করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, প্রশাসন এবার পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন বলে তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন।
ইতিমধ্যে পুজামন্ডপ গুলোর জন্য সরকারী সাহায্যও দেয়া হয়েছে। সাতক্ষীরার পুলিশ সপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম মুনির জানান,দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে প্রতিটি পূজামন্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পাশাপাশি তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। দুূর্গোৎসবকে ঘিরে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নজর দারিতে রয়েছে বলে আরো জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ জানান, অন্যান্যবারের ন্যায় এবারও আনন্দঘন পরিবেশে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনা বাহিনী, র্যাব, বিজিবি সবাই এ উৎসবকে সফল করার জন্য সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
আবু জাফর
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি