উজ্জ্বল কুমার সরকার
নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার নাকইল মৌজায় খাস সম্পত্তিতে গড়ে ওঠা ভ‚মিহীন পল্লীর দখল নিতে আবারও তৎপরতা শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে ভুমিদস্যুদের বিরুদ্ধে। ভুমিদস্যুদের এ তৎপরতায় ওই পল্লীর বাসিন্দাদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পল্লীটির দখল নিতে ২০০৭ সালে প্রকাশ্য দিবা লোকে ভাড়াটিয়া বাহিনী দিয়ে নারকীয় তান্ডব চালায় ভুমিদস্যুরা। লুটপাট অগ্নি সংযোগসহ গুড়িয়ে দেওয়া হয় ভুমিহীনদের বসতঘর। বাধা দিতে গিয়ে আহত পল্লীর অনেক নারী-পুরুষ। ২০০৯ সালে রাতের অন্ধকারে হত্যাকাÐের শিকার হন পল্লীর এক বাসিন্দা। ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিয়ে পল্লীর বাসিন্দাদের গণহারে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে মান্দা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন নাকইল ভুমিহীন পল্লীর বাসিন্দা নীলচাঁন সরদার। এসময় ওই পল্লীর বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন, বিশ^নাথ হেমব্রম ও ফারাঞ্চি মরমু উপস্থিত ছিলেন। ভুমিহীন পল্লীর বাসিন্দা নীলচাঁন সরদার বলেন, নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের নাকইল মৌজায় প্রায় ৪০ একর এক নম্বর খতিয়ানভ‚ক্ত সম্পত্তি ছিল। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা ভুমিহীন পরিবার ওই সম্পত্তিতে থাকা ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার করে বসতি গড়ে তোলেন। এরপর খাস পুকুরে মাছ ও জমিতে ফসল চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন অন্তত ১০০ ভ‚মিহীন পরিবার। এ অবস্থায় ওই সম্পত্তির ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে জীবনপুর গ্রামের নুর মোহাম্মদ, রফিকুল ইসলাম, আজাহার আলীসহ কয়েক ভুমিদস্যুর। ২০০৭ সালে ২০মে দিবালোকে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ওই ভুমিহীন পল্লীতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় তারা। এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।
ভুমিহীন নীলচাঁন সরদার আরও বলেন, এর পর ২০০৯ সালের ১৫ মে রাতের অন্ধকারে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ভুমিহীন পল্লীর বাসিন্দা রতন হাজরা। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পুলিশের সঙ্গে যোগসাজস করে ভুমিহীন পল্লীর বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে মামলা করিয়ে নেয় ভুমিদস্যুরা। মামলার পর গণগ্রেপ্তার শুরু করে পুলিশ। গ্রেপ্তার এড়াতে ওই সময় পল্লীটি পুরুষশুন্য হয়ে পড়ে। এ সুযোগে ভুমিদস্যুরা আবারও ওই পল্লী উচ্ছেদের চেষ্টা করে। পল্লীর বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ওই সম্পত্তি নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা চলছে। মামলা নিষ্পত্তি না হলেও শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে ভুমিদস্যুরা। তারা জাল দলিলের মাধ্যমে ওই সম্পত্তি বিক্রির পাঁয়তারা করছে। এতে ভ‚মিহীন পল্লীর বাসিন্দাদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নাকইল গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ হেমব্রম অভিযোগ করে বলেন, ‘একই মৌজায় আমাদের পৈত্রিক ৭২ বিঘা সম্পত্তি জবরদখল করে নিয়েছেন ওইসব ভুমিদস্যুরা। ভ‚য়া রেকর্ড করে ভোগদখল করছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আমরা আদালতে মামলা করেছি। এর পর থেকে তারা বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে।’অভিযোগের বিষয়ে মোবাইলফোনে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আজাহার আলী বিষয়টি জানা নেই বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।