আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু ও টাইফয়েড আক্রান্ত এক রোগীর শার্টের কলার ধরে ধাক্কা মারার অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে অসুস্থ ওই রোগীর ভর্তিও বাতিল করা হয়েছে। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
তবে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বরাতে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, বাদানুবাদ হলেও রোগীকে ধাক্কা দেওয়ার কোনও ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে অভিযুক্ত চিকিৎসকের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ করেছেন রোগীর স্বজন ও স্থানীয়রা।
অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম বায়োজিদ হাসান বাঁধন। রোগীর নাম ইসরাইল হোসেন (৪৫)। তিনি উপজেলার পানিমাছকুটি গ্রামের বাসিন্দা। ডেঙ্গু ও টাইফয়েড আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।
রোগী ইসরাইল হোসেন দাবি করেন, গত বুধবার সকালে তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। বেড নম্বর-৩ । শুক্রবার সকালে এক রোগী ভর্তি হয়ে তার পাশের বিছানায় চিকিৎসা নেন। এক পর্যায়ে ওই রোগী বিছানায় পায়খানা করলে পুরো ওয়ার্ডে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে ওয়ার্ডে রোগীদের অবস্থান করা কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। এ অবস্থায় সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসক বায়োজিদ হাসান বাঁধন ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে আসেন। পাশেই ঝাড়ুদার বারান্দা পরিষ্কার করছিলেন। এ সময় ওয়ার্ডে দুর্গন্ধের বিষয়ে চিকিৎসকের মনোযোগ আকর্ষণ করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে তাগাদা দেওয়ার অনুরোধ করতেই চিকিৎসক রেগে যান।
ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘ডাক্তার আমাকে বলেন, “তুমি যা বলবে তাই শুনতে হবে।” উত্তরে আমি বলি, তাহলে আপনাকে বলে লাভ কী। আপনিও মনে হয়, কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন। এই কথায় ডাক্তার আমার শার্টের কলার ধরে ধাক্কা মারেন। নার্সকে দিয়ে ভর্তি ফাইল নিয়ে এসে আমার ভর্তি বাতিল করেন। ধমক দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।’
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্বজনরা ওই চিকিৎসকের অপসারণ এবং বিচারের দাবিতে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করে।
ঘটনাস্থলে যাওয়া ফুলবাড়ী থানার এসআই নাজমুল হক বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা পরিস্থিতি শান্ত করি। রোগী এবং চিকিৎসকের জবানবন্দি গ্রহণ করেছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চিকিৎসক বায়োজিদ হাসান বাঁধনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. সুমন কান্তি সাহা বলেন, ‘ঘটনা ও রোগীর অভিযোগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। রোগীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তা কর্তৃপক্ষের কাছে অগ্রগামী করা হবে।’
চিকিৎসকের আচরণ ও রোগীর ভর্তি বাতিল প্রশ্নে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটলেও রোগীর গায়ে হাত দেওয়ার কোনও ঘটনা ঘটেনি বলে ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন। পুলিশও সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। রোগী নিজে থেকে বাড়ি যেতে চেয়েছেন বলেও ওই চিকিৎসক দাবি করেছেন।’
‘পরে আমি রোগিকে থাকতে বললেও তিনি থাকতে চাননি। তিনি বলেছেন, এখন ভালো আছেন। বাড়িতে থেকে চিকিৎসা চালাবেন। প্রয়োজনে তাকে চিকিৎসা সহায়তার কথা জানিয়েছি।’
সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ বলেন, ‘ঘটনা জেনেছি। স্থানীয়দের বিক্ষোভ ও দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। আশা করছি, রবিবার ওই চিকিৎসকের বিষয়ে বিভাগীয় সিদ্ধান্ত জানা যাবে।’