
আসাদুর রহমান হাবিব ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)।
বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম গত ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ইং তারিখে নিজ ফেসবুক ভেরিফাইড পেইজে ফুলবাড়ীর কয়লাখনি নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ফুলবাড়ী উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দরা।
বুধবার ১০ ডিসেম্বর দুপুর ১২ টায় ফুলবাড়ী পৌর শহরের নিমতলা মোড়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী উপজেলা শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল লিখিত বক্তব্যে বলেন আমরা উদ্বেগের সাথে জানাচ্ছি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গত ৬ ডিসেম্বর ২০২৫-খ্রিটাব্দে তাঁর ফেসবুক ভেরিফাইড পেইজে ফুলবাড়ী নিয়ে ইতিহাস বিকৃতির এবং লুটপাটের সাফাই দিয়েছেন।
তাঁর এই বিতর্কিত বক্তব্যের আমরা কঠোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই ফুলবাড়ী আন্দোলন ছিল জাতীয় সম্পদ রক্ষার লড়াই কোন দলীয় এজেন্ডা নয় প্রায় ২০ বছরের পুরনো এক বিতর্কিত খনিপ্রকল্প কে পুনরায় জীবন্ত করার চেষ্টা করছেন এটা জাতির নিরাপত্তার বিরুদ্ধে চক্রান্তের অংশ এবং অমার্জনীয় অপরাধ।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব দাবি করেছেন ফুলবাড়ীসহ বাংলাদেশের কয়লা উত্তোলন না করাটা ছিল আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
আমরা তাঁকে জানিয়ে দিতে চাই তাঁর এই বক্তব্য তথ্যবিকৃতি একপেশে ব্যাখ্যা এবং জনগণের ন্যায্য আন্দোলনকে অপবাদ দেয়ার ব্যর্থ অপচেষ্টা।
তাঁরা আরও বলেন সরকারের প্রেস সচিব কর্তৃক ২০০৬ সালের ঐতিহাসিক ফুলবাড়ী আন্দোলনকে হেয় প্রতিপন্ন করে এবং পরিবেশ বিনাশি ওপেন পিট কয়লা খনির পক্ষে যে সাফাই গাওয়া হয়েছে তা কেবল বিভ্রান্তিকরই নয় বরং বিগত দুইদশকের জ্বালানি খাতের মেধাগত দেউলিয়াত্ব এবং আমদানি নির্ভর লুটপাটতন্ত্র আড়াল করার একটি অপকৌশল।
প্রেস সচিব তাঁর বক্তব্যে দাবি করেছেন দেশীয় কয়লা উত্তোলন না করার কারণেই বাংলাদেশ জ্বালানি সংকটে পড়েছে এবং ভারতীয় কয়লার উপর নির্ভরশীল হয়েছে,তাঁর এই বক্তব্যকে আমরা খোঁড়া যুক্তি হিসেবে প্রত্যাখ্যান করছি।
সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা আরও বলেন প্রেস সচিব দেশে জ্বালানি খাতে ২ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের যে গল্প শুনিয়েছেন তা অসম্পূর্ণ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
২০০৬ সালে এশিয়া এনার্জির সাথে যে দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করতে জনতা জীবন দিয়েছিল সেখানে বাংলাদেশের রয়্যালিটি ছিল মাত্র ৬ শতাংশ অর্থাৎ ১০০ টাকার কয়লা উত্তোলনে ৯৪ টাকায় চলে যেত বিদেশি কোম্পানির পকেটে।
তাঁরা বলেন দেশের ৩ ফসলি উর্বর জমি ও পানির আধার ধ্বংস করে মাত্র ৬ শতাংশ রয়্যালিটির বিনিময়ে দেশের সম্পদ তুলে দেওয়াকে অর্থনৈতিক মুক্তি বলা যায় না এঁকে বলা হয় রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাচার আর এই কয়লা দেশে ব্যবহার হতো না এর ৮০ শতাংশ রপ্তানির জন্য রেললাইন তৈরির খরচও ৬ শতাংশ রয়্যালিটি থেকে বহন করতে হতো।
তাঁরা আরও বলেন বাংলাদেশের নিবিড় জনবসতিপূর্ণ উর্বর জমির তুলনা করা ভৌগোলিক অন্ধত্বের শামিল ফুলবাড়ী ও দিনাজপুর অঞ্চল দেশের অন্যতম প্রধান শস্যভাণ্ডার এখানে ওপেন পিট বা উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের অর্থ হলো বিশাল এলাকাজুড়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এবং চিরস্থায়ী ভাবে ফসলি জমি ধ্বংস করা এবং উত্তরবঙ্গকে মরুভূমিতে পরিণত করে দেশে জ্বালানি নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তা বিসর্জন দেওয়া কোন সুস্থ মস্তিষ্কের নীতি হতে পারে না।
আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এর ফুলবাড়ী নিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহার এবং লন্ডনে খুনি এশিয়া এনার্জির (জিসিএম) কোম্পানির বার্ষিক সাধারণসভা (এজিএম)এর প্রতিবাদসহ ৬ দফা দাবিতে আগামী ১৭ ডিসেম্বর বুধবার সকাল ১১টায় ফুলবাড়ী পৌর শহরের নিমতলা মোড়ে প্রতিবাদ সভা কর্মসূচির ঘোষণাও করেন তাঁরা।