1. admin@alorbangladesh.com : Alor Bangladesh : Dainnik alor Bangladesh
  2. info.popularhostbd@gmail.com : PopularHostBD :
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
টেকনাফে হোয়াইক্যং চেকপোস্টে ইয়াবা বোঝাই সিএনজিসহ চালক আটক। নাসিরনগরে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করলেন সাংসদ পুত্র সৈয়দ সাজ্জাদ মোর্শেদ সোহান। সড়ক দুর্ঘটনায় চৌগাছায় এক নারীর মৃত্যু। নরসিংদীতে ১২ ডিসেম্বর জেলা হানাদার মুক্ত দিবস পালিত। রায়পুরা উপজেলার সাংবাদিক দের সাথে, নবাগত ইউ,এন,ও র মতবিনিময় সভা। সাতক্ষীরায় ইউএনওর অভিযানে চিংড়িতে পুশ করায় ১লক্ষ টাকা জরিমানা। দেশে ফিরেছেন মির্জা ফখরুল উপজেলা প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ কর্তৃক দুম্বার মাংস বিতরণ । সীতাকুণ্ডের কুমিরায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিএনপির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত রাজস্থলীতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন।

ভুয়া কাগজে ব্যাংক লুট

এবি নিউজ ডেস্ক:
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩৫ বার পড়া হয়েছে

এবি নিউজ ডেস্ক:

-সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে সম্পত্তি বন্ধক রেখে নেওয়া ঋণের অডিট জরুরি ♦ জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ২০ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা ♦ অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ও ব্যাংক খাতের সংস্কার চান অংশীজনেরা।

বিগত ১৫ বছরে ঋণের জামানত হিসেবে জমি আর ফ্ল্যাটের ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ব্যাংক খাতে মহালুটপাট হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্রমতে, ব্যাংকে বন্ধক রাখা সম্পদ বিক্রি করেও খেলাপি ঋণের অর্থ আদায় করতে পারেনি অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক।
অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক আর ক্রেতা যোগসাজশে ঋণের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সম্পত্তি বন্ধক রেখে নেওয়া ঋণের অডিট প্রয়োজন।
আর্থিক খাতের দুর্বৃত্তায়ন ঠেকাতে অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত। পাশাপাশি ব্যাংক খাতের সংস্কারও নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন অংশীজনেরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, খেলাপি ঋণ ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ হওয়া ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট বা বিআইবিএম ২০২৩ সালে ‘ক্রেডিট অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক গবেষণায় বলছে, গত বছরের জুন শেষে জমি বন্ধক রেখে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ২০ হাজার ৯০৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বিশাল অঙ্কের এ ঋণের ৬৩ দশমিক ৬৮ শতাংশই জমি-ফ্ল্যাট-বাড়িসহ রিয়েল এস্টেট সম্পত্তি বন্ধক রেখে নেওয়া হয়েছে। অতীতে এসব তথ্য একাধিকবার গণমাধ্যমে উঠে এলেও সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য মৌলিক সংস্কার দরকার।
বড় বড় ব্যবসায়ীদের কোনো রিস্ক ফ্যাক্টর নেই। কিন্তু তাঁদের মধ্যে অনেকেই ইচ্ছাকৃত খেলাপি। এ ধরনের খেলাপি সংস্কৃতি দূর করতে হবে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘যাঁরা ভুয়া জামানত, একই জামানত একাধিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা বিরাট চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর এসব বিষয়ে কাজ হাতে নিয়েছেন।যদিও কাজটি অনেক কঠিন, তবে করা সম্ভব।’ ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন- এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে যাঁরা ব্যাংকের অর্থ লুটপাট করেছেন, তাঁদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে। জড়িত গ্রাহক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। ’ এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল বলেন , ‘বর্তমান সরকারের কাছে ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। একটি দেশের ব্যাংক খাত এভাবে ধ্বংস হতে পারে না। সরকারের উচিত হবে অন্যায়কারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, যা দেখে ভবিষ্যতে কোনো অসাধু ব্যক্তি জনগণের গচ্ছিত আমানত ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করতে না পারেন। ’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ব্যাংক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঋণের নামে অর্থ লুটপাটের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সংগতি রেখেই জমি বন্ধক রেখে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ বের করা অপেক্ষাকৃত সহজ। সরকারি খাসজমি, বিতর্কিত মালিকানার জমি বন্ধক রেখেও ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ বের করে নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংক কর্মকর্তারা সহযোগীর ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রভাবশালীদের বন্ধকি জমির মূল্য কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। এ কারণে জামানতের সম্পদ বিক্রি করে খেলাপি ঋণ আদায় সম্ভব হচ্ছে না।
বিআইবিএমের ওই গবেষণার তথ্য বলছে, জামানতের সম্পদ বিক্রি করে দেশের ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের মাত্র ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ আদায় করতে পারছে। সে অনুযায়ী, জামানত থাকার পরও অনাদায়ী থেকে যাচ্ছে ৮৭ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ। জামানত বিক্রি করে অবলোপন করা ঋণ আদায়ের পরিস্থিতি আরও খারাপ। জামানতের সম্পদ বিক্রি করে ঋণ আদায় সম্ভব না হলেও ব্যাংকগুলো জমি-বাড়ি বন্ধক রেখে ঋণ বিতরণ বাড়িয়েছে। এক যুগ আগে ২০১০ সালে জমি বন্ধকের বিপরীতে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা, যা ছিল ওই সময় বিতরণকৃত মোট ঋণের ৪৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
ওই গবেষণায় বলা হয়, দেশের ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে জামানতকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিলেও বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রি করে খেলাপি ঋণ আদায় হচ্ছে না। ব্যাংকের কাছে বন্ধক থাকা সম্পদ বিক্রি করে মাত্র ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ খেলাপি ঋণ আদায় সম্ভব হয়েছে। আর ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে আদায়কৃত খেলাপি ঋণের হার ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায়-অযোগ্য হয়ে যাওয়া খেলাপি ঋণ অবলোপন করছে ব্যাংকগুলো। জামানতের সম্পদ বিক্রি করে অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের হার মাত্র ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে দেওয়া অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের হার মাত্র ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ বলে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণায় উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতের ঋণের স্থিতির বিপরীতে রাখা গ্রাহকের জামানতের ৬৩ দশমিক ৬৮ শতাংশই ছিল স্থাবর সম্পত্তি। যদিও এক যুগ আগে ২০১০ সালে এ হার ছিল ৪৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এক যুগ ধরেই ঋণের বিপরীতে জমি বন্ধক রাখার প্রবণতা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। দেশের ব্যাংক খাতের জামানতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ হলো ব্যাংক গ্যারান্টি। এ ছাড়া ব্যাংক জামানতের ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ ফাইন্যান্সিয়াল অবলিগেশনস, ৫ দশমিক ১২ শতাংশ রপ্তানি ডকুমেন্টস ও পণ্যদ্রব্য, ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ মেশিনারি যন্ত্রপাতি ও ফিক্সড্ অ্যাসেট, শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ শেয়ার অ্যান্ড সিকিউরিটিজসহ অন্যান্য সম্পত্তি ঋণের বিপরীতে জামানত রয়েছে। গত জুন শেষে ব্যাংক খাতের বিতরণকৃত ঋণের মোট স্থিতি ছিল ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭২ কোটি টাকা।

সূত্র জানান, দেশের ব্যাংক খাতের আলোচিত ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলোয় জামানতের স্থাবর সম্পত্তিকে অতিমূল্যায়িত করে দেখানোর বিষয়টি ধরা পড়েছে। হলমার্ক, ক্রিসেন্ট, বিসমিল্লাহ গ্রুপের জালিয়াতি ধরা পড়লেও এসব গ্রুপের জামানতের সম্পদ বিক্রি করে অর্থ আদায় সম্ভব হয়নি। দফায় দফায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও ক্রেতা মেলেনি কেলেঙ্কারিতে যুক্ত গ্রুপগুলোর জামানতের সম্পদের। ব্যাংক খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়া অন্য গ্রুপগুলোর জামানতের সম্পদের পরিস্থিতিও একই। সূত্র জানান, বিভিন্ন সময় রাজধানী ঢাকা ও পাশের বিভিন্ন এলাকার সরকারি খাসজমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ বের করে নেওয়ার অসংখ্য ঘটনা সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামসহ সারা দেশেই বিতর্কিত ও সরকারি জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ বিতরণের ঘটনাও প্রকাশ হয়েছে। এসব প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, জামানত হিসেবে ব্যাংকগুলোর কাছে যে জমি বন্ধক আছে, তার বৃহৎ অংশই বিতর্কিত। নদী, নদীর চর, শিকস্তি (নদীতে ভেঙে যাওয়া) ভূমি, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি ও বন, পাহাড়, রেলওয়েসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জমি ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখেছেন প্রভাবশালী গ্রাহকরা। বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের জায়গা দখল করে অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছিলেন মিরপুরের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক রাজনীতিক। দখলকৃত ওইসব জায়গা বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকে জামানত দিয়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। সুদসহ সে ঋণ এখন সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। দখলকৃত জায়গা উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। যদিও উদ্ধারকৃত জায়গার বড় অংশই আবার ব্যাংকের কাছে জামানত রয়েছে।
সূত্র আরও জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সহরটোক মৌজার পাঁচটি দাগের এক একরের বেশি জমি জামানত নিয়েছে দেশের বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংক। এর বিপরীতে একটি নামসর্বস্ব আবাসন কোম্পানিকে ২৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। বন্ধকি সম্পত্তির পুরোটাই ব্রহ্মপুত্র নদের চালা ও শিকস্তি ভূমি। ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ, দোহার, ডেমরা, সাভারসহ পাশের জেলাগুলোয় রয়েছে বিপুল পরিমাণ সরকারি খাসজমি। পাশাপাশি ওয়াক্ফ স্টেটেরও বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে এসব এলাকায়। অথচ সরকারি ও ওয়াক্ফকৃত এসব সম্পত্তির বড় অংশই বিভিন্ন ব্যাংকে জামানত দিয়েছেন প্রভাবশালী গ্রাহকরা। বিপরীতে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো। এ পরিস্থিতিতে বিতর্কিত জমি বন্ধক রেখে বিতরণকৃত ব্যাংক ঋণের কতটুকু ফিরে আসবে, তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।

সংবাদ টি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved
Design BY POPULAR HOST BD