এবি নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশের ওষুধ ও পোশাকশিল্প খাত যে উন্নতি করেছে তা নিয়ে অনেকের ঈর্ষা আছে উল্লেখ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করে শ্রমিক বিক্ষোভকে উসকে দিয়ে এবং এর মধ্যে বহিরাগত অনুপ্রবেশ করে আমাদের এই বাজার দখলের এক ধরনের পাঁয়তারা চলছে। আমরা এটাকে কঠোর হস্তে দমন করবো। একই সঙ্গে শ্রমিকদের যেসব ন্যায্য এবং আইনসঙ্গত দাবি আছে সেগুলো পূরণেও এই সরকার কাজ করবে।
চলমান শ্রমিক বিক্ষোভ নিয়ে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা। সংবাদ সম্মেলনে আসার আগে তিনি শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেন।
উপদেষ্টা আসিফ বলেন, আরএমজি এবং নন-আরএমজি উভয় ক্ষেত্রে কিছু শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে। আমাদের শ্রমিকদের কিছু দাবি আছে। গত ফ্যাসিবাদী সরকার একপেশে যে আচরণ করেছে এবং গত বছর আমরা দেখেছি মজুরি নির্ধারণ আন্দোলনে কীভাবে গুলি করে চারজন শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। নিপীড়নমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে শ্রমিকদের নামে। এই সরকার শ্রমিকদের ন্যায্য এবং আইনসঙ্গত সব দাবি পূরণে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কাজ করতে বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালে মজুরি আন্দোলনে শ্রমিকদের নিপীড়নমূলক এবং মিথ্যা যেসব মামলা দেওয়া হয়েছিল, সেসব মামলা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। সেই মামলাগুলো দ্রুত তুলে নেওয়ার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বকেয়া বেতন নিয়ে যে শ্রমিক বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে, আমরা ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি, খুব দ্রুত যেন মালিকপক্ষ বকেয়া বেতন পরিশোধ করেন। তার জন্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে গতকাল থেকে আমরা পালাক্রমে বৈঠক করছি। গতকাল দুইটা এবং আজ একটাসহ তাদের সঙ্গে তিনটি মিটিং হয়েছে। তারা সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন শ্রমিকদের কিছু দাবি-দাওয়া তো আছেই, এর পাশাপাশি বহিরাগত যাদের শ্রমিক ও শিল্পের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, এমন কিছু লোকজন দেখা যাচ্ছে, যারা হেলমেট ও হাফপ্যান্ট পরে বিভিন্ন কারখানায় ঢিল ছুড়ছে, হামলা করছে।
আসিফ বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই এ ধরনের যারা দুষ্কৃতকারী এবং বহিরাগতরা এসে দেশের শিল্প ধ্বংসের মতো পাঁয়তারা এবং ষড়যন্ত্র করছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে। শ্রমিকদের যে ন্যায্য দাবি-দাওয়া আছে, সেগুলোর বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে এবং তাদের যেগুলো লং টার্ম দাবি-দাওয়া আছে, সেগুলো সমাধানের ব্যাপারে আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করে যাবো। কিন্তু যারা ষড়যন্ত্র করছে এবং দুষ্কৃতকারী যারা আছে, যাদের চিহ্নিত করা গেছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, আমরা এটাও জানতে পেরেছি ঝুট ব্যবসা দখলের নামে বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাস হচ্ছে এবং কোপাকুপির মতো ঘটনা ঘটেছে। ঝুট ব্যবসা দখলের জন্য সেখানে কিছু আনরেস্ট তৈরি করা হচ্ছে এবং এখানে কিছু রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করছেন। সে ব্যাপারটি সমাধানের জন্য সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে প্রায় সাত কোটি ৩০ লাখ শ্রমিক আছেন। তাদের কাজের মাধ্যমে, শ্রমের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল আছে। গত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে লাখ লাখ কোটি টাকা এ দেশ থেকে পাচার হয়েছে, অনেক দুর্নীতি হয়েছে, তারপরও দেশের অর্থনীতির এখনো পর্যন্ত সচল অবস্থায় আছে আমাদের আরএমজি এবং নন-আরএমজি সেক্টরের যে শ্রমিকরা কাজ করে যাচ্ছেন এই বিকশিত হওয়ার কারণে।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এখন নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করে শ্রমিক বিক্ষোভকে উসকে দিয়ে এবং এর মধ্যে বহিরাগত অনুপ্রবেশ করে আমাদের এই বাজার দখলের এক ধরনের পাঁয়তারা চলছে। আমরা এটাকে কঠোর হস্তে দমন করবো। একই সঙ্গে শ্রমিকদের যেসব ন্যায্য এবং আইনসঙ্গত যেসব দাবি আছে সেগুলো পূরণেও এই সরকার কাজ করবে।
আমাদের গার্মেন্টসের বাজার কারা দখল করতে চায়? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অসিফ বলেন, আমাদের শুধু গার্মেন্টস না, নন-আরএমজি সেক্টরের যে ওষুধ শিল্প, আমাদের ওষুধ শিল্প ঈর্ষণীয়ভাবেই ভালো করেছে বিগত বছরগুলোতে এবং ওষুধে আমরা মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং আমরা বিদেশেও রপ্তানি করছি।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি গত ৫০ বছরে সেখানে (ওষুধ শিল্পে) কোনো আনরেস্ট হয়নি। তারা সব ধরনের স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলে এবং শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে সেখানে কখনো কোনো আনরেস্ট হয়নি। কিন্তু এখন আমরা দেখতে পারছি কিছু বহিরাগত লোকজন ঢুকে সেখানে সমস্যা তৈরি করার চেষ্টা করছে। আমরা দেখেছি যে সবগুলো ওষুধ কারখানাগুলোতে একই ধরনের দাবি। সেখানে অনেকগুলো অযৌক্তিক দাবি আমরা দেখেছি।
তিনি আরও বলেন, ওষুধ শিল্প এবং গার্মেন্টস সেক্টরে বাংলাদেশ যে উন্নতি করেছে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রাখা এবং উন্নতি করার গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, সেটা নিয়ে অনেকেরই ঈর্ষা আছে। অনেকেরই সেই বাজার দখলের প্রয়াস এর আগেও আপনারা দেখেছেন। আমাদের যারা ক্রেতা আছেন বাইরের তাদের কাছে যদি তুলে ধরা যায়, এখানে পরিস্থিতি ভালো না, সেক্ষেত্রে সেটা তাদের জন্যই পথ তৈরি করে দেয়। সে জায়গা থেকে আমাদের কাছে ইনফরমেশন আছে, আমরা দেখছি যে যারা বহিরাগত এবং এই শিল্প ও শ্রমের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, তাদেরও এখানে ঢোকানো হচ্ছে এবং ইনভেস্ট করা হচ্ছে তাদের এখানে রাখার জন্য। লাঠিসোঁটা নিয়ে কারখানায় হামলা করছে।
আসিফ মাহমুদ বলেন, অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি শ্রমিকরা তাদের বাধা দিচ্ছেন হামলা করা থেকে। এই জায়গায় থেকে আমরা মনে করছি একটা চেষ্টা হচ্ছে বাজার দখলের। কিন্তু শ্রমিকরা এ বিষয়ে সচেতন আছেন, শ্রমিকরা তাদের কারখানা রক্ষায় কাজ করছেন। আমরা মনে করি এ ধরনের কোনো ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
কারখানা মালিকদের সফট লোন দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে এই উপদেষ্টা বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তিন হাজার কোটি টাকা সফট লোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটাকে আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, আমরা তার চেষ্টা করছি।
আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান পরিস্থিতি কী? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তার উত্তরে আসিফ বলেন, গতকাল পরিস্থিতি কিছুটা কঠিন ছিল। তবে আজ মোটামুটি পরিস্থিতি উন্নতির দিকে আছে এবং চিহ্নিত করা গেছে করা এই সমস্যা উসকে দিচ্ছে এবং বহিরাগত কারা আসছে। সে জায়গা থেকে শ্রমিকরাও যথেষ্ট সতর্ক অবস্থানে আছেন। সেই জায়গা থেকে আমরা আশা করি আগামী দুই-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
মালিকদের কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, মালিকদের দ্রুত বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে বলা হয়েছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে সফট লোন দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত এক মাসের আন্দোলনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের সফট লোন দেওয়ার মাধ্যমে যাতে শ্রমিকরা দ্রুত বেতন পায়, সে ব্যাপারে মালিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।