তাজুল ইসলাম, বোয়ালখালী প্রতিনিধি:
আসন্ন কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে টুং টাং শব্দে শেষ সময়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বোয়ালখালী উপজেলা ও পৌরসভার কামাররা। চলছে হাঁপর টানা, পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। হাতুড়ি পিটিয়ে কামার তৈরি করছেন দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম।
হাতুড়ি আর লোহার টুংটাং শব্দে মুখরিত কামার পাড়াগুলো। ঈদের দিন পর্যন্ত চলবে এমন ব্যস্ততা। তবে কয়লা, লোহাসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো লাভ হয় না। কিন্তু পূর্ব পুরুষের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন অনেকে।
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করছেন কামাররা। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে তাদের জিনিসপত্রের কেনা-বেচা বেড়ে যায়। এ থেকে অর্জিত টাকায় সারা বছরের খোরাক জোগাড় করেন। অথচ বছরের বেশিরভাগ সময়িই কামার শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা একপ্রকার বেকার সময় কাটান।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাপাতি, দা, বটি, চাকু, ছুরি তৈরি এবং পুরোনো অস্ত্র শান দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দম ফেলার ফুরসৎ নেই। ঈদ উপলক্ষে লোহার বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কামার শিল্পীরা। গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছেন সবাই।
অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছরই কোরবানীর ঈদে দা, বটি, ছুরি, চাপাতিসহ লোহার বিভিন্ন জিনিসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ মৌসুম ঘিরে ভালো আয়-উপার্জন করে থাকেন তারা।
বর্তমানে বেচাকেনা কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে গোমদন্ডী ফুলতল এলাকার দুলাল কর্মকার নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, বছরের এই ঈদ মৌসুমটাই আমাদের মূল টার্গেট থাকে। বছরের কয়েকটা দিন ভালো টাকা, ভালো উপার্জন করার চিন্তা করলে এই দিনগুলা ঘিরেই করা হয়। কিন্তু এ বছর ভরা বৃষ্টির মৌসুম থাকার কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছর কাজ একটু কম। অনেকটা হতাশায় দিনকাটছে কামার শিল্পীদের।
কামার মিন্টু দাশ জানান, এ বছর অন্যান্য বছর থেকে কাজ ঠান্ডা, অলস সময় পার করছি। ক্রেতার সংখ্যা কম। পূর্ব পুরুষের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এখনো পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছি। তবে তুলনামূলকভাবে এ বছর কাজ কম।
ক্রেতারা জানান, প্রতি বছরই কোরবানি আসলে দা, বটি, চাপাতি, ছুড়িসহ আরো অনেক জিনিসপত্র কিনতে হয়। তবে এবছর লোহা ও কয়লার দাম বৃদ্ধি হওয়ায় গতবছরের চাইতে বেশি দাম দিয়ে জিনিসপত্র কিনতে হচ্ছে তাদের। কয়েক দিন পরেই ঈদ। গরু ও ছাগল জবাই দিতে এবং মাংস কাটতে প্রয়োজন চাকু ও ছুরির। সে কারণে বাজারে এসেছি দা, বটি ও ছুরি কিনতে। তবে গতবছরে এসব জিনিসের যে দাম ছিল তার চেয়ে এবারে দাম খানিকটা বেশি। বর্তমানে প্রতিটি দা তৈরিতে প্রকারভেদে মজুরি নেওয়া হচ্ছে দা-বটি শান দেওয়া-১৫০ টাকা। চুরি-৬০টাকা, দামা-১৫০টাকা, বটি-১০০টাকা মজুরী নেওয়া হচ্ছে। নতুন দা-৪০০ থেকে ৫০০টাকা, চুরি-১৫০ টাকা, বটি-৩০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
উপজেলা ও পৌরসভার শাকপুরা, গোলকমুন্সির হাট, কাননুগোপাড়া ঘুরে দেখা যায় বেশিরভাগ দোকানে শেষ সময়ে ব্যস্ততা বেড়েছে কামার শিল্পীদের।