মোঃ মাইনুদ্দিন শিকদার
বিশেষ প্রতিনিধি ।
গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৯৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১১০০ জনকে আসামি করে আলাদা দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।বুধবার রাতে মামলা দায়ের করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহেল রানা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শ্রীপুরে গুলিতে নিহত রহমত মিয়ার বাবা মুঞ্জু মিয়া ও নিহত জাকির হোসেন রানার বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে এসব মামলা দায়ের করেন। এ নিয়ে গাজীপুরের বাসন থানা, গাছা থানা ও শ্রীপুর থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে মোট ৭ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।মামলার এজাহারে শেখ হাসিনা ছাড়াও উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী টুসি, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সাবেক শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জামিল হাসান দুর্জয়, সাবেক শ্রীপুর পৌর মেয়র আনিছুর রহমান, হুমায়ুন কবির হিমু, সিরাজুল ইসলামসহ ৯৭ জন।মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত আগস্ট ৫ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বিজিবি সদস্যদের ঢাকাতে সমবেত করার সিদ্ধান্ত নেয় বিগত স্বৈরাচারী সরকার। সরকারের নির্দেশনা পেয়ে একাধিক বাসে করে ময়মনসিংহের বিভিন্ন ক্যাম্পে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বিজিবি সদস্যদের বহনকারী বাসগুলো শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর (পল্লী বিদ্যুৎ ও বাংলাদেশ এনার্জি সেন্টার) সামনে পৌঁছালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখোমুখি হয়। বিজিবি সদস্যদের দিয়ে ঢাকার ছাত্র-জনতার আন্দোলন হটানো হবে, তাদের আটকে রাখা হয়েছে বলে খবর প্রকাশ হলে স্থানীয় আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, এসময় বিজিবি সদস্যদের ঢাকায় পাঠাতে আওয়ামী লীগের নেতারা ঘটনাস্থলে পৌছে বিজিবি সদস্যদের সাথে থাকা অস্ত্র, গুলি ছিনিয়ে নিয়ে এবং কিছু অতি উৎসাহী বিজিবি সদস্য আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগীতায় বিকেল ৪ টার দিকে ১ থেকে ১২ নম্বর আসামিদের নির্দেশক্রমে ও ১৩ থেকে ৩৭ নম্বর আসামিরা বিজিবি সদস্যদের নিয়ে ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ছোড়া গুলিতে আন্দোলনে থাকা শ্রীপুরের কপাটিয়াপাড়া গ্রামের জাকির হোসেন রানার (৩৫) বুকের মাঝামাঝি গুলিবিদ্ধ হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে জাকির হোসেন রানাকে উদ্ধার করে কেওয়া পশ্চিম খন্ড গ্রামের প্রশিকা মোড় এলাকার আল হেরা মেডিকেল সেন্টারে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, অপর মামলায় বাদী মুঞ্জু মিয়া অভিযোগ করেন, গত ৫ আগস্ট সকালে বিজিবি সদস্যদের বহনকারী বাসগুলো মুলাইদ গ্রামের পল্লী বিদ্যুৎ মোড় এলাকায় পৌঁছালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখোমুখি হয়। এসময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতারা ঘটনাস্থলে পৌছেন। এসময় ১ থেকে ১৬ নামীয় আসামিদের নির্দেশে ১৭ থেকে ৬০ ও অজ্ঞাতনামা আসামিগণ ঘটনার দিন সাড়ে ৫টার দিকে বিজিবি সদসাদের সাথে থাকা অস্ত্রগুলি ছিনিয়ে ও উপস্থিত আসামিগণদের নিকট থাকা অস্ত্র দিয়ে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালায়।
এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা এজাহারনামীয় ২৬নং আসামি হারুন অর রশিদ ওরফে বাঘ বাদল ও ৪৪নং এজাহারনামীয় আসামি রাসেল শেখের হাতে থাকা বিদেশী অস্ত্রের গুলিতে আন্দোলনে থাকা রহমত মিয়া ডান হাতের নিচে বুকের পাঁজরে বিদ্ধ হয়। রহমত মিয়াকে উদ্ধার করে কেওয়া পশ্চিম খন্ড গ্রামের প্রশিকা মোড় এলাকার আল হেরা মেডিকেল সেন্টারে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।