রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ০৮:১৬ অপরাহ্ন

ভোলায় চোরের বিচারের দাবিতে গ্রামবাসীর বিক্ষোভ মিছিল।

এমদাদুল হক, স্টাফ রিপোর্টার (ভোলা)।
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫
  • ৭৮ বার পড়া হয়েছে

এমদাদুল হক, স্টাফ রিপোর্টার (ভোলা)

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নজরুল নগর ইউনিয়নে গরু-মহিষ চুরির, চোর চক্রের সর্দার দুইসহোদর মন্নান (৪০) ও মজিদ (২৮) এর বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন গ্রামবাসী।

উপজেলার নজরুল নগর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের কুরালিয়া সেন্টার বাজারে ৫ শতাধিক নারী-পুরুষ এই বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। মিছিলটি বাজারের উত্তর মাথা থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ মাথায় শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলটিতে ঘন্টা ব্যাপি চোর চক্রের প্রধান মন্নান ও মজিদের বিচারের দাবী জানানো হয়।

এসময় মিছিল চলাকালে বিক্ষোভকারীরা চোর চক্রের প্রধান দুই ভাই মন্নান ও মজিদ চোরের কালোহাত, ভেঙে দাও-গুড়িয়ে দাও, চোর সর্দ্দারের আস্তানা এই গ্রামে হবে না। ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা।

অভিযুক্ত মন্নান ও মজিদ একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত কাদের হাওলাদারের দুই ছেলে।

জানা যায়, নজরুল নগর ইউনিয়ন ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা চোর চক্রের প্রধান মন্নান ও মজিদ নামের দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিমল, শাহেব আলী, আবুল কালাম, সাহাগ ও পারভেজ দীর্ঘদিন ধরে গরু-মহিষ চুরি করে আসছে । তারা নিজ এলাকার প্রতিটি বাড়ী থেকে গরু-মহিষ চুরি করে অন্যত্রে পাচার করে। এছাড়াও এই সংঘবদ্ধ চোরচক্রটি এলাকার বাহিরে বিভিন্ন এলাকায় গরু-মহিষ চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে এবং জেল খেটেছে। জেল থেকে বের হয়েও তারা থেমে থাকে না, পুনরায় চুরির কাজে লিপ্ত হয়ে পরে। সম্প্রতি একই ওয়ার্ড থেকে ১৫ জন কৃষকের ৫০ টি গরু-মহিষ চুরি করে এই চোর চক্রটি। গত ১৭ মে শনিবার ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা সৈয়দ আলী ও সাগর নামের দুই ব্যক্তির ২টি গরু নিয়ে যায়। পরে স্থানীয় জনতা তাদেরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা গরু চুরির বিষয়টি স্বীকার করে এবং গরু এনে দেওয়ার কথা বলে মুক্তি পায়। তবে চোর চক্রটি গরু না দিয়ে বিভিন্ন তাল বাহানা শুরু করে। এবং স্থানীয় জনতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালায়। এই বিষয়ে মঙ্গলবার স্থানীয় জনতা চোর চক্রের প্রধান মন্নান ও মজিদ এর বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

আরও জানা যায়, একই এলাকার বাসিন্দা দেলু সর্দারের ৪ টি, কামাল ফরাজীর ৫টি, ইউনুছ হাওলাদারের ২টি, ইদ্রিস হাওলাদারের ২টি, শাহাজানের ২টি, নুরে আলম হাজীর ৩টি, সাগর চৌকিদারের ১টি, মোশারেফ ফকিরের ১টি, কবির হাওলাদারের ২টি, হাসান সর্দারের মহিষ ৫টি, সেলিমের ৪টি গরু, জসিম সিকদারের ৩টি, জনু ফকিরের ৩টি, মাইনুদ্দিন সর্দারের ২টি, আকতারের ১টি, সোরাব হাওলাদারের ১টি ও চর মানিকার চর ফারুকির আমজাদ ফকিরের ৩টি গরু নিয়ে গেছে এই চোর চক্রটি।

বিক্ষোভ মিছিলে বক্তব্যতে মহিষ মালিক মনির হোসেন জানান, দক্ষিণ আইচা থানার চর পাতিলার চরে আমার একটি মহিষের পাল রয়েছে। প্রায় এক মাস পূর্বে নৌকা যোগে নদী পথে আমার পালিত ২টি মহিষ নিয়ে যায় মন্নান ও মজিদ। তারা এলাকায় সংঘবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন মানুষের গরু ও মহিষ নিয়ে যায়। তাদের অত্যাচারে মানুষ এখন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাই তাদের বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে।

বক্তব্যতে গরু মালিক সেলিম জানান, সে একজন হতদরিদ্র কৃষক। কৃষি কাজের পাশাপাশি তার চারটি গরু ছিল। সেগুলো লালন-পালন করে পরিবারের ভরণ-পোষণ যোগাতেন। গত ১৬ এপ্রিল রাতের আঁধারে তার গরুর গোয়াল ঘর থেকে ৪ টি গরু নিয়ে যায় মন্নান ও মজিদ সহ তার সাঙ্গুপাঙ্গুরা। পরে আমি বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। আমি গরু গুলো হারিয়ে আজ নিঃস্ব। আমি চোর মন্নান ও মজিদের বিচার চাই।

স্থানীয় একাধিক নারী-পুরুষ বলেন, চোর চক্রের প্রধান মন্নান ও তার ভাই মজিদের চুরি করার কারনে রাতে ঘুম হয় না। রাতে ঘরের দরজা আটকিয়ে ঘুমাতে চাইলে ঘুম হয় না। মনে হয় তারা আমার ঘোয়ল ঘর থেকে গরু নিয়ে যাচ্ছে তারা প্রশাসনের কাছে চোরের বিচারের দাবী জানিছেন। বিচার না হলে কঠিন আন্দোলনে যাবেন বলে হুশিয়ারী দিয়েছেন।

নজরুল নগর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল সরদার ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি ইউনূস জানান,আমরা দেখে এসেছি মন্নান ও মজিদ তার সাঙ্গুপাঙ্গুদের নিয়ে এলাকা ও এলাকার বাহিরে অনেক গরু-মহিষ চুরি করছে। এবং বহু স্থানে তারা ধরা পড়েছে। তারা এলাকার গরু-মহিষ চুরি করে পার পেয়ে যায়। এলাকার প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে তারা গরু-মহিষ চুরি করছেন। অনেক অসহায় পরিবারের আছে যাদের আয় রোজগারের একমাত্র মাধ্যম হলো গরু লালন-পালন। এমন কিছু অসহায় পরিবারের গরু নিয়ে যাওয়ার ফলে ওইসব পরিবার অসহায় হয়ে পরেন। তাদের এসব চুরি থেকে রক্ষা পেতে ৫ শতাধিক গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে তাদের বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। চোর চক্রের প্রধান মন্নান ও মজিদকে আইনের আওয়তার আনার দাবী করেন তিনি।

অভিযুক্ত চোর চক্রের প্রধান মন্নান ও মজিদের বাড়িতে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। তবে তাদের ব্যবহৃত মোবাইলে কল দেয়া হলে তারা জানান, আমাদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসির আনিত অভিযোগগুলে সঠিক নয়। আমরা এলাকার বাহিরে রয়েছি পরে কথা হবে বলে ফোন কেটে দেন।

দক্ষিণ আইচা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এরশাদুল হক ভূইয়া জানান, শুনছি মঙ্গলবার দুপুরে গরু চোর মন্নান ও মজিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন গ্রামবাসী। ওই চোর চক্রের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা রয়েছে। পুলিশ তাদের আটকের চেষ্টা চলাচ্ছে।

সংবাদ টি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ