মোঃ নুরুন্নবী কক্সবাজার শহর প্রতিনিধি
দীর্ঘ ১৭ বছর পর কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল অনুমোদন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আনন্দ র্যালী করেছে। র্যালী শেষে করা হয় মিষ্টি বিতরণ। একে অপরকে মিষ্টি মুখ করিয়ে ভাগাভাগি করেন আনন্দ।
বুধবার (২১ মার্চ) বেলা ১২ টার দিকে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস থেকে আনন্দ র্যালী শুরু করে মূল ফটক হয়ে ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়। পরে সেখানেই করা হয় মিষ্টি বিতরণ।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির সংগঠক এবং কলেজটির শিক্ষার্থী আসিফুল হক বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছি হাসপাতালের জন্য। কলেজে হাসপাতাল না থাকায় প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরের কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে ব্যবহারিক ক্লাস করতে হতো আমাদের। শিক্ষার্থীদের চেয়ে বাসের সংখ্যাও কম থাকায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হতো। এখন হাসপাতাল হয়ে গেলে আমাদের এসব কষ্ট লাঘব হবে। হাসপাতাল অনুমোদন করায় আমরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানাই।
আরেক শিক্ষার্থী জিন্নাতুন নাহার বলেন, কক্সবাজার মেডিকেলে হাসপাতাল বাস্তবায়ন হলে জটিল জটিল রোগের চিকিৎসা হবে এখানে। যেমন কিডনির ডায়ালাইসিস, আইসিইউ, সিসিইউ সহ সকল ডিপার্টমেন্ট থাকবে। একারণে আমাদের কষ্ট লাঘবের পাশাপাশি উপকৃত হবে এখানকার সাধারণ মানুষ।
কক্সবাজারের বাসিন্দা এবং কলেজটির শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, কক্ষেের ২৯ লক্ষ সাধারণ মানুষ এবং ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাস। এছাড়াও লক্ষ লক্ষ পর্যটকের সমাগম থাকে সবসময়। একারণে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল খুবই প্রয়োজন ছিলো। একারণে আমাদের জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে ব্যবহারিক ক্লাস করতে হবে না। এবং কক্সবাজারবাসী সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে। একারণে আমি কক্সবাজারের বাসিন্দা এবং শিক্ষার্থী হিসেবে খুবই খুশি।
পরে কলেজটির অধ্যক্ষ সহ শিক্ষকদের সাথেও আনন্দ ভাগাভাগি করেন শিক্ষার্থীরা। কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সোহেল বকস্ কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং মিষ্টি মুখ করিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া তিনিও মিষ্টি খাইয়ে দেন শিক্ষার্থীদের।
এসময় অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সোহেল বকস্ বলেন, কক্সবাজারবাসীর এবং কলেজের প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি ছিলো কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল। এটি ক্রয় কমিটির মিটিং এ চুড়ান্ত অনুমোদন হওয়ায় আমরা খুবই সন্তুষ্ট। আগামী ২ মাসের মধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হতে পারে। যেটি ২০২৯ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
জানা যায়, ২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সদর হাসপাতালের পাশে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শুরু হয় কলেজের কার্যক্রম। এরপর দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০১৭ সালে ঝিলংজায় নিজস্ব ক্যাম্পাসে শুরু হয় শ্রেণী কার্যক্রম। কিন্তু হাসপাতাল না থাকায় শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাস করতে আসতে হতো ৮ কিলোমিটার দূরে জেলা সদর হাসপাতালে। নামে আধুনিক কলেজ হলেও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে আছে মাত্র দুটি সাদামাটা বাস। সেই সাথে চরম শিক্ষক সংকট, আছে আবাসন সংকট। পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হবে, এমন প্রত্যাশার প্রহর গুণতে গুণতে দুর্ভোগ সাথী করেই বিদায় নিয়েছে কলেজের ১৪ টি ব্যাচ। একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজের সাথে থাকার কথা ৫০০ শয্যার হাসপাতাল। ন্যুনতম ২০ টির মতো বিভাগে চিকিৎসা সেবা। কিন্তু এর কোনো ছোঁয়াই পায়নি কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ। শূন্য পড়ে আছে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপকের অধিকাংশ পদ। ওএসডি মূলে সহকারী অধ্যাপককে কলেজে সংযুক্তি দিলেও মূলত জুনিয়র শিক্ষকদের দিয়ে কলেজটির কার্যক্রম জোড়াতালি দিয়ে চলছে। এছাড়াও ১০ তলার একাডেমিক ভবনে নির্মাণ হয়েছে ৬ তলা। দুটি ছাত্রাবাসের ছয় তলা করে হওয়ার কথা থাকলেও তিনতলা করেই ফেলে রাখা হয়েছে। যার জন্য কক্ষ সংকটের কারনে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে থাকতে হয় গণরুমে। এতে করে ব্যহত হয় নিয়মিত পড়াশোনা।