মো:রমিজ আলী,
সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি(চট্টগ্রাম)
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনেকদিন পর বহু বছর আগের সেই ঈদের নামাজ আদায় করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং বিএনপির সাবেক যুগ্ন মহাসচিব অধ্যাপক লায়ন আসলাম চৌধুরী এফসিএ ঈদ উদযাপন করেন।
দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর জেলে কাটিয়েছি স্বৈরাচারের রাজনৈতিক রোষানলে পড়ে। এসময়ের মধ্যে আপনাদের সাথে ঈদ করতে পারিনি। জানি আপনারা হামলা, মামলায় ভালো ছিলেন না।পরিবারকে দূরে রেখেই ঈদ করেছেন কেবল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে। বাড়িতে গেলেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে থাকতে হতো। এবারই প্রথম দেশবাসী স্বৈরাচারমুক্ত হয়ে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঈদ উদযাপন করবে।
লায়ন আসলাম চৌধুরী বলেন, ঈদের আনন্দ দরিদ্র ও। অসহায়দের সাথে ভাগাভাগি করে নিলেই এর স্বার্থকতা। আপনারা এই ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্বিঘ্নে ও আনন্দ সহকারে নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ উদযাপন করবেন। আত্মীয়-স্বজন, মরহুম মা-বাবার কবর জিয়ারত করবেন। পাড়া প্রতিবেশী ও গরিব পরিবারের খোঁজখবর নেবেন। তাদের ভবিষ্যৎ ভালো করার জন্য চিন্তা-ভাবনা করবেন, সহযোগিতা করবেন। আপনার সন্তানদের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দেবেন, এই কামনা করছি।
এসময় তিনি আরও বলেন, আমার দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে দেশবাসীকে জানাই ঈদ মোবারক। ঈদুল ফিতর মানেই আনন্দ, উল্লাস, হাসি আর পরিবারের কাছে যাওয়া। কর্মব্যস্ত জীবন থেকে কিছু দিনের জন্য অবসর পেয়ে পরিবারের সাথে সময় কাটানো। মায়ের হাতের সেমাই, চুটকি খেতে খেতে ভাই-বোনদের সাথে স্মৃতিচারণ করা, বড়দের কাছ থেকে স্নেহ পাওয়া। ঈদ আপনার আমার সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।
ঈদের জামাত পড়তে গিয়ে অধ্যাপক লায়ন আসলাম চৌধুরী বলেন, সীতাকুণ্ড থানার প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন,আপনারা সাধারণ জণগণের সেবক,জনগণকে সেবা দেওয়া আপনাদের মৌলিক দায়িত্ব। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আসলাম চৌধুরী। সোমবার সকালে সীতাকুণ্ড সরকারি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে মাঠে আয়োজিত ঈদের নামাজ আদায় করতে গিয়ে স্থানীয় মুসল্লিদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন,গত বুধবার উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নে উপজেলা কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের হাতিলোটা গ্রামের মো. বশির (৩৫), মুরাদপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন (৩২), একই ইউনিয়নের আরমান শাকিল (৩৫) ও মো. রাসেলকে (৩৮) গ্রেপ্তার করে সীতাকুণ্ড পুলিশ। তাঁরা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের নেতা।
চার নেতাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ঈদের নামাজ পড়তে আসা প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও স্থানীয় মুসল্লিদের উদ্দেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে আসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমি থানা প্রশাসনকে বলতে চাই। বিশেষ করে আমাদের ওসি সাহেব। কিছুদিন আগে একটা মার্ডার ঘটেছে, নাসির হত্যা। এই হত্যার মামলাটা ওসি সাহেবের রুমে বসে পরিকল্পিতভাবে আমাদের কিছু লোককে ইচ্ছাকৃতভাবে আসামি করা হয়েছে। আমাদের দলের যে লোক হোক আপনি সঠিক আসামি চিহ্নিত করবেন। অন্যথায় আপনারা কোনো প্রকার বায়াসড হয়ে মামলা করেন, আপনাদের আমি বলে দিচ্ছি এই ঈদগাহের মাধ্যমে।আপনারা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাকারীদের শনাক্ত করবেন।অন্যথায় আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব ইনশাল্লাহ সামনের দিনগুলোতে। এই ছেলেগুলো বিগত অনেক সময় আমার সঙ্গে জেলে কাটিয়েছে। হ্যাঁ! তাদের অনেক ছোটখাটো অপকর্ম আছে। কয়েকজনের অনেক অপকর্ম আছে। আমি জানি তাদের এই অপকর্মগুলো এ রকম সিরিয়াস কোনো অপকর্ম তাদের নেই। সুতরাং বিষয়টি আমার মাথায় নিয়েছি আমি। আমাদের অনেক মিডিয়াও ইচ্ছাকৃতভাবে কথাগুলো অন্যায়ভাবে প্রচারণা করে তাদের বিরুদ্ধে ও ব্যবস্তা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড থানার ওসি মো. মুজিবুর রহমান বলেন, বাদীপক্ষ নিজেরা মামলা করেছে। এখানে তাঁদের (পুলিশের) কোনো ভূমিকা নেই। আর আমরা আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি হত্যাকারীদের সনাক্ত করার জন্য। রাজনীতিবিদরা অনেক ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য দেন। এটি নিয়ে তাঁর কিছু বলার নেই। কাজটি অন্যায় নাকি ন্যায় করেছেন সেটি হচ্ছে মূল বিষয়।
অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে আসলাম চৌধুরী বলেন, বাদীকে ডেকে নিয়ে প্রকৃত আসামিদের বাদ দিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের আসামি করেছেন সীতাকুণ্ড প্রশাসন। তাই অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করা হলে, গ্রেপ্তার করা হলে দেশের যে জায়গায় থাকুক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।