বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫৬ পূর্বাহ্ন

‎অ‌লির ঢাকায় ভর্তি পরীক্ষা দি‌তে যাওয়ার টাকা নেই ‎

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ৮ মার্চ, ২০২৫
  • ৪৮ বার পড়া হয়েছে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।

‎ঠিকভা‌বে তিন বেলা খে‌তে পা‌রেনি অলি । লেখাপড়া করার খরচ ছিল না। স্যারেরা ফ্রি প্রাইভেট পড়িয়েছেন, পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রু‌পের উপবৃ‌ত্তির মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে অলি

‎তি‌নি ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের বি-ইউনিটে (কলা,আইন ও সামা‌জিক বিজ্ঞান) ভ‌র্তির সু‌যোগ পে‌য়ে‌ছেন। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৯.২৫।

‎অ‌লির বা‌ড়ি কু‌ড়িগ্রা‌মের উলিপুর পৌরসভার হায়াৎখাঁন এলাকায়। বাবা জহুরুল হক (৫২) একজন রিকশাচালক। মা কল্পনা বেগম (৪২) স্থানীয় এক‌টি কারুপ‌ণ্যের শ্রমিক। শত কষ্ট আর দা‌রিদ্রতা‌কে হার মা‌নি‌য়ে সন্তা‌নের এমন সফলতায় উচ্ছ্ব‌সিত এই দম্প‌তি । ২০২৪ সা‌লের এইচএস‌সি পরীক্ষার ফলাফ‌লে উলিপুর সরকা‌রি ক‌লেজ থে‌কে মান‌বিক শাখায় জি‌পিএ-৫ পে‌য়ে‌ছেন আল আমিন হো‌সেন অ‌লি। এর আগে ২০২২ সা‌লে উলিপুর মহারাণী স্বর্ণময়ী স্কুল অ্যান্ড ক‌লেজ থে‌কে এসএস‌সি পরীক্ষার ফলাফ‌লে জি‌পিএ-৫ পান। প‌রে তা‌কে উচ্চমাধ্যমিক পর্যা‌য়ে লেখাপড়ার জন্য দে‌শের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ শিক্ষা বৃ‌ত্তি প্রদান ক‌রে।

‎আল আমিন হো‌সেনের বাবা জহুরুল হক বলেন, অ‌নেক কষ্ট ক‌রে ছাওয়াটা‌কে পড়াইছি। এর ম‌ধ্যে বি‌ভিন্ন সাহায্য সহ‌যো‌গিতাও পে‌য়ে‌ছি। এখন ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ে চান্স পে‌য়ে‌ছে। খুবই খু‌শি হ‌য়ে‌ছি।তি‌নি আরো ব‌লেন, আমি গরির মানুষ। নুন আন‌তে পান্তা ফুরা‌য়। জ‌মিজমা বল‌তে দুই শতক বসতবা‌ড়ি। ১৫ বছর বাদাম বি‌ক্রি ক‌রে‌ছি। গ্রা‌মে ফে‌রি ক‌রে‌ দুই মে‌য়ে‌কে বি‌য়ে দি‌য়ে‌ছি। দীর্ঘ ২৫ বছর ধ‌রে রিকশা চা‌লাই। এখন বয়স হ‌য়ে‌ছে ঠিকম‌তো চলা‌ফেরা কর‌তে পা‌রি না। ঋণ ক‌রে ব্যাটা‌রিচা‌লিত এক‌টি রিকশা বা‌নি‌য়ে‌ছি। সে‌টিও পুরাতন হ‌য়ে‌ছে। ওটা দি‌য়েই কোনোরকম আয়‌ রোজগার ক‌রি। তা‌ দি‌য়ে টে‌নেটু‌নে সংসার চ‌লে।



‎শিক্ষার্থী অ‌লি ব‌লেন, এইচএস‌সি পাস করার পর বসুন্ধরা গ্রুপ থে‌কে শিক্ষাবৃত্তি বন্ধ হ‌য়ে গে‌লে হতাশায় প‌ড়ে যাই। ম‌নে হ‌য়ে‌ছিল আর পড়া‌শোনা কর‌তে পারব না। প‌রে ক‌লে‌জের খায়রুল ইসলাম স্যারের সহ‌যো‌গিতায় বিনামূ‌ল্যে ভ‌র্তি কো‌চিং ক‌রলেও ঢাকায় পরীক্ষা দি‌তে যাওয়ার টাকাও ছিল না। আল্লাহর রহমতে বি-ইউনিটে ভ‌র্তির সু‌যোগ পে‌য়ে‌ছি, এখনতো আরো অ‌নেক টাকা লাগ‌বে।

‎উলিপুর সরকা‌রি ক‌লে‌জের প্রভাষক খায়রুল ইসলাম জানান, যাদের ভ‌র্তি কো‌চিং করার ম‌তো সাধ্য নেই তা‌দের‌কে ‘স্বপ্নপূরণ’ অ্যাড‌মিশন অ্যান্ড একা‌ডে‌মিক কেয়া‌রের মাধ্যমে ভ‌র্তি কো‌চিং করা‌নো হয়। আল আমিন হোসেন অ‌লিও এই কো‌চিংয়ের একজন শিক্ষার্থী। সে অত্যন্ত মেধাবী, বিনয়ী, ভদ্র এবং সম্ভাবনময় ছাত্র। বাবা-মা দরিদ্র হওয়ায় তার পক্ষে শিক্ষার ব্যয় ভার বহন করা খুবই কষ্টকর। তা‌কে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য প্রস্তুত করতে বিনামূল্যে সহায়তা করেছি। অলি হোসেন দেখিয়ে দিয়েছে ঠিক দিকনির্দেশনা পেলে গ্রাম থেকেও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে চান্স পাওয়া যায়।

সংবাদ টি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ