বাগেরহাট প্রতিনিধি।
বাগেরহাট মোরেলগঞ্জ বিশখালী সরকারী কমিউনিটি ক্লিনিকে ৫দিন ধরে তালাবদ্ধ, কোন দায় নেই কতৃপক্ষের। সিএইচসিপি সোমা রানী দাসের জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে গত (২০ ফেব্রুয়ারি) দীপা বালা দাস (৪০) নামের এক নারী ঐ ক্লিনিকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। ৫দিন ধরে ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ রয়েছে। যার ফলে স্বাস্থ্য সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন প্রত্যন্ত এলাকার গরীব অসহায় দুঃস্থ বাসিন্দারা। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অবগত থাকলেও এখনো আইনী কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে নাই। সরকারী নিজ¯^ জমিতে র্নিমিত ভবনে ক্লিনিক,সেই ক্লিনিকে তালা ঝুলিয়ে গ্রামের গরীব অসহায় দুঃস্থ মানুষদের স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত কারীর বিরুদ্ধে নেওয়া হয় নাই কোন আইনী পদক্ষেপ।
২০১৫ সালে বিষখালী এলাকায় সিএইচসিপি সোমা রানী দাসের বাবা মৃত সুনিল কুসার দাসের জমিতেই এই কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়।সুনিল কুমার দাসের ছোট এবং সিএইচসিপির ভাই জগবন্ধু দাস ক্লিনিকের অনুকূলে সাব কবলা দলিল করে দেয়। কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্য্যক্রম যথারীতি চলছে, গেল জানুয়ারি মাস থেকে জগবন্ধুর মেজ ভাই বাদল দাস ও তার স্ত্রী দীপা বালা দাস পৈত্রিক সুত্রে ক্লিনিকের জমিতে অংশ দাবি করে সিএইচসিপি সোমা রানী দাসকে ক্লিনিকে দায়িত্ব পালনে বাঁধা সৃষ্টি করেন।
চলতি মাসের ১১ ফেব্রুয়ারি দীপা বালা দাস হঠাৎ কমিউনিটি ক্লিনিকে এসে দায়ীত্বে থাকা (সিএইচসিপি) সোমা রানী দাসকে গালি গালাজ করে। তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। বিষয়টি নিয়ে মোরেলগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিলেও কোন সুরাহা হয়নি। এসব কারণে ওই সিএইচসিপি সোমা রানী দাস নিয়মিত ক্লিনিকে আসতে পারেন না। বিষয়টি নিয়ে মোরেলগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিলেও কোন সুরাহা হয়নি।
গেল এই মঙ্গলবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১০টায় সড়েজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিকের প্রধান গেটে এবং ভবনের দরজায় তালা মারা। ভবন থেকে কয়েকশ গজ দূরে একটি কাঠের বেঞ্চিতে বসে ক্লিনিক খোলার জন্য অপেক্ষা করছেন সুইটি বেগম নামের এক নারী।
তিনি বলেন, প্রায় দেড় কিলোমিটার হেটে ১০টার দিকে এসেছি। এখনও ক্লিনিক খোলেনি। অপেক্ষায় আছি ডাক্তারের (সিএইচসিপি)।
স্থানীয় বাসিন্দা সুজিত দাস বলেন, ডাক্তারের (সিএইচসিপি) ভাবি নাকি তালা দিয়ে দিয়েছে এখনও খোলেনি।
ক্লিনিকের পাশে কৃষি কাজ করা এক পুরুষ ও এক নারীর কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, এটা ননদ-ভাবীর সমস্যা। এটা তাদের পারিবারিক জটিলতা। এসব নিয়ে আমরা কথা বললে, আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)সোমা রানী দাস বলেন, আমার ছোট ভাই জগবন্ধু ক্লিনিকের অনুকূলে জমি দলিল করে দিয়েছে। মেজ ভাই বাদল দাস ও তার স্ত্রী যদি জমি পায়, তাহলে আমার বাবার আরও জমি আছে, আমিও বাবার জমি পাব, আমার মা পাবেন, আমার বড় ভাই পাবেন। সেই জমি আমার মেজ ভাইকে দিব। তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাকে হয়রানি করা। আমাকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দেওয়া। আমার ভাইয়ের স্ত্রী ক্লিনিকে এসে আমাকে মারধর করার চেষ্টা করে। লাঠি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে, আমাকে মারার জন্য। এসব কারণে আমি গেল দুই সপ্তাহ ধরে নিয়মিত ক্লিনিকে যেতে পারি না। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী সমাধান করার চেষ্টা করলেও, কোন সমাধান হয়নি। আমি নিয়মিত শান্তিতে চাকরি করতে চাই। এজন্য পুলিশ প্রশাসন ও তার উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই সিএইচসিপি।
স্থানীয়দের নিয়ে গঠিত কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাধন চক্রবর্তী বলেন, দীপা বালা দাস ক্লিনিকে তালা দিয়েছেন। দীপা বালা দাস সিএইচসিপি সোমা রানী দাসকে মারধরেরও চেষ্টা করেছে। বিষয়টি আমরা পুলিশ এবং স্বাস্থ্য ও উপজেলা পরিবারের পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। কিন্তু এখনও কোন সমাধান হয়নি।
এসব বিষয়ে দিপা বালা দাস ও তার স্বামী বাদল দাসকে ফোন করা হলেও, তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি।
মোরেলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)মো. রাকিবুল হাসান বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যও পরিবারের পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, বিষখালি ক্লিনিকের জটিলতার বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। স্থানীয়দের নিয়ে গঠিত কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা করার যে কমিটি রয়েছে, তাদেরকে দিপা বালা দাসকে সামাজিকভাবে প্রতিহত করতে বলা হয়েছে। পুরো বিষয়টি জমিজমা এবং পারিবারিক। এসব কারণে সিএইচসিপিকে আদালতে মামলা দিতে বলা হয়েছে। সে মামলা দিলে আমরা তাকে সহযোগিতা করব।#