মোঃ সেলিম রেজা, নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি:
শেরপুরের নকলায় শিক্ষার্থীদের নিজ হাতে আঁকা সচেতনতা মূলক গ্রাফিতি ও দেওয়াল লিখনের মাধ্যমে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ও জরাজীর্ণ দেওয়াল সমূহ ব্যতিক্রমী সাজে সেজেছে। পথচারীসহ সবার দৃষ্টি কাড়ছে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ দেওয়ালের গ্রাফিতি ও সচেতনতা মূলক লিখনি।
উপজেলা পরিষদ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী, থানা, হাসপাতাল, নকলা পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নকলা শাহরিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, সরকারি হাজী জালমামুদ কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ দেওয়ালে দেওয়ালে আঁকা হয়েছে সচেতনতা মূলক গ্রাফিতি ও দেশ সংস্কারের লক্ষ্যে বিভিন্ন সচেতনতা মূলক লেখনি।
সেখানে শোভা পাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের রং তুলির আঁচড়ে ফুটে ওঠা কোটা আন্দোলনের শ্লোগানসহ দেশের বিভিন্ন অন্যায়ের চিত্র আর সমাজ সংস্কারমূলক উক্তি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন উক্তি ও চিত্র আঁকছেন। প্রথমে একদল শিক্ষার্থী জরাজীর্ণ দেওয়াল পরিষ্কার করছে। অন্যদল বিভিন্ন রং মিশিয়ে তুলির আঁচড়ে উক্তি, আলপনা ফুটিয়ে তুলছেন। আঁকা হচ্ছে উৎসাহমূলক নানা চিত্র। আন্দোলনে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের স্মরণ করে জানানো হয় শ্রদ্ধা। সমাজ বা রাষ্ট্রের কাছে শিক্ষার্থীদের কি চাওয়া তা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন তারা। শিক্ষার্থীদের রং তুলির আঁচড়ে আঁকা শিল্পকর্ম আকৃষ্ট করছে পথচারী ও সাধারণ মানুষদের।
দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে- ‘ঘুষ হীন দপ্তর’, ঘুষ চাইলে ঘুসি’, ‘বৈষম্যহীন দেশ গড়ি’, ‘দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ব’, ‘পুলিশ নয় ক্ষমতার পুলিশ হোক জনতার’, ‘মোরা আকাশের মতো বাধাহীন’, ‘পৃথিবীটা মানুষের হোক ধর্ম থাকুক অন্তরে, মসজিদে আযান হোক ঘণ্টা বাজুক মন্দিরে’, স্বাধীনতা এনেছি দেশটাকে গড়বো’, ‘বাক স্বাধীনতা?’ এমন সচেতনতা মূলক নানান উক্তি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শরীফুল ইসলাম জানান, আগে যেসকল দেওয়াল রাজনৈতিক বা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের পোস্টারে ঢাকা থাকতো, আজ ওইসব দেওয়াল সেজেছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের রং তুলির আঁচড়ে। তিনি বলেন, ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন হয়েছে। এরপরেই আমরা শুরু করি পরিচ্ছন্নতার কাজ। এছাড়া যানজট নিরসনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের নিজের হাতে চিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে শহরের প্রতিটি দেওয়ালে গ্রাফিতি ও লিখনীর মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন তথ্য বা শ্লোগান সবার মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছি আমরা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবিদুর রহমান সেজান জানান, কোটা আন্দোলন দিয়ে শুরু করে এক দফার মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে শিক্ষার্থীরা। তিনি বলেন, নকলা উপজেলাকে অপশক্তি থেকে মুক্ত করে এবংয় জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তারুণ্যের রঙে রঙিন হচ্ছে আমাদের প্রিয় নকলা।
চট্টগ্রাম প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহবুবা লায়লা প্রমা বলেন, আগে যেসকল গুরুত্বপূর্ণ দেওয়ালে আজেবাজে লেখা ও পোস্টার লাগানো থাকতো। আজ ওইসব দেওয়ালে আমাদের সচেতনতা মূলক গ্রাফিতি ও লেখা দিয়ে সাজিয়েছি। এতেকরে দেওয়ালের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সকল দপ্তরে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে।
ঢাকা আমর্ড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আইনীল মার্জিয়া সুমান্ত বলেন, আমাদের মতো সারাদেশের সকল উপজেলার বিভিন্ন দেওয়াল গুলোকে সংস্কার মূলক লেখাতে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এইসব লেখা ও গ্রাফিতি দেখে ২০২৪ সালের ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের বিষয় সম্পর্কে জানবে। তাতে করে নিজেদের অধিকার কিভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হয় সে সম্পর্কে বুঝতে পারবে তারা।
শিক্ষার্থী মাসুদ ও সাব্বিরসহ অনেকে জানান, সরকার পতনের পরে ট্রাফিক আইনসহ শান্তি শৃঙ্খলার অবনতি দেখা দেয়। তাই ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ সচেতনতা মূলক বিভিন্ন গ্রাফিতি ও দেওয়াল লিখনের মাধ্যমে জনগনকে তারা সচেতন করে তোলেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জড়িতদের ত্যাগ মানুষের মাঝে স্মরণীয় করে রাখতেই আমরা দেওয়ালে দেওয়ালে চিত্র আঁকছি, লিখছি সচেতনতা মূলক বিভিন্ন কথা। এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে নতুনভাবে শুরু হওয়া বাংলাদেশের গল্প। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অভ্যুত্থানের অবদান তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমরা। দেশ সংস্কারের জন্য যেকোন পরিস্থিতিতে যেকোন সময় মাঠে নামতে শিক্ষার্থীরা সর্বদায় প্রস্তুত আছেন বলেও তারা জানান।