সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ০৯:১৯ পূর্বাহ্ন

গনতন্ত্রের পথে বাংলাদেশ – মফিজার রহমান রাজু সাবেক সদস্য ঢাকা জেলা সেচ্ছাসেবক দল, আশুলিয়া থানা যুবদল

মোঃ রিয়াদুল ইসলাম জামাল সাভার,প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ২২৪ বার পড়া হয়েছে

মোঃ রিয়াদুল ইসলাম জামাল
সাভার,প্রতিনিধি

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এক গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে, যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক। শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের শাসন, তার দমনমূলক আচরণ, ক্ষমতার অবাধ ব্যবহার এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার অপকর্ম আজ দেশটির সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং মানবিক মূল্যবোধের ওপর ভয়াবহ আঘাত হেনেছে।
২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটি একটি একনায়কতন্ত্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে জনগণের মৌলিক অধিকার, স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ অক্ষুণ্ন হয়ে পড়েছে। শেখ হাসিনার শাসন শুধু অতীতের স্বৈরাচারী সরকারগুলোর শাসনের তুলনায় আরও অত্যাচারী নয় বরং এটি দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ও জনগণের জীবনমানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আধিপত্য ও ক্ষমতার লালসা
মানুষের মধ্যে আধিপত্য এবং ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা একটি গভীর মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক সমস্যা। ক্ষমতার লোভ এবং এর অপব্যবহারের ফলে যে সামাজিক অবক্ষয় ঘটে, তা একদিকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নৈতিকতাকে ধ্বংস করে এবং অন্যদিকে জাতীয় পর্যায়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
শেখ হাসিনার সরকারের কর্মকাণ্ডে আমরা দেখতে পাই, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য কৌশলগতভাবে বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনিক যন্ত্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে জনগণের ন্যায্য অধিকারকে উপেক্ষা করা হয়েছে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, গুম, খুন এবং ভুয়া মামলার মাধ্যমে তাদের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে।
এই দুর্দশার মূল কারণ হলো, ক্ষমতা ও আধিপত্যের লোভে শেখ পরিবার দেশের শাসনকে একনায়কতন্ত্রে পরিণত করেছে। এসব অপ্রিয় সত্যকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। শেখ পরিবার রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকে জনগণের মৌলিক অধিকার এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, যার ফলে দেশের অর্থনীতি ও সমাজে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
জাতির পিঠ যখন দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছিল, তখন শিক্ষার্থীদের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের সহযোগীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এসব ঘটনা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, শেখ পরিবার জাতির জন্য একটি অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের ভূমিকা ও ষড়যন্ত্র
ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও কৌশলগত হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে এই সম্পর্ক বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে গভীর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে ভারতের বর্তমান বিজেপি শাসিত প্রশাসনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরকারের ঘনিষ্ঠতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। তিস্তা নদীর পানি-বণ্টন চুক্তি বছরের পর বছর ঝুলে থাকা, সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যাকাণ্ড এবং ভারতের ব্যবসায়িক আধিপত্য দেশের জনগণের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন চুক্তি এবং সহযোগিতা বারবার একতরফাভাবে ভারতের স্বার্থ রক্ষা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পানি-বণ্টন সমস্যা, সীমান্তে বিএসএফের হাতে নাগরিক হত্যার মতো বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের পরিপন্থি হলেও, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো প্রতিরোধ দেখা যায়নি।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ভারতকে ব্যবহার করে দেশের অভ্যন্তরে বিভাজন সৃষ্টি এবং জনগণের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ানোর কৌশল। ভারতীয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বৈরিতা এবং বিভক্তির শেকড় আরও গভীর হয়েছে। একদিকে, এ ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ধ্বংস করছে, অন্যদিকে নতুন প্রজন্মের কাছে বিভ্রান্তিমূলক বার্তা পাঠাচ্ছে।
এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি একটি হুমকি তৈরি করেছে। তিস্তা চুক্তি এবং সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সঠিক কূটনৈতিক অবস্থান নিতে না পারা সরকারের ব্যর্থতাকে জনগণ আর উপেক্ষা করতে রাজি নয়। এখন সময় এসেছে এই সমস্যাগুলোর সমাধান ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় একটি ঐক্যবদ্ধ, দূরদর্শী এবং সাহসী নেতৃত্ব প্রদর্শনের।

সংবাদ টি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ